নদ ও নদীর পার্থক্য
অনেকদিন যাবৎ এ বিষয়টি নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ছিলাম। ড. মোহাম্মদ আমীন এর একটি লেখা পেয়ে হুবহু কপি পেস্ট করলাম।
কোনও জলপ্রবাহের নাম যদি মহিলাবাচক
হয় তাহলে নদী এবং
পুরুষবাচক হলে নদ।
গঙ্গা, সরস্বতী, যমুনা, পদ্মা, গৌরী,
ভাগীরথী, চিত্রা, নর্মদা, কাবেরী, কৃষ্ণা কর্ণফুলী প্রভৃতি
মহিলাবাচক নাম, তাই নদী
লেখা হয়। কপোতাক্ষ,
ব্রহ্মপুত্র, নারদ, ভৈরব, কুমার, মুসা
খান, মির্জা মাহমুদ প্রভৃতি
পুরুষবাচক নাম, তাই নদ
লেখা হয়। অনেকে মনে করেন,
যে জলস্রোতের নামের শেষে আ-কার কিংবা ই-কার থাকে তাকে
নদী বলা হয়।
অন্যদিকে যে জলস্রোতের নামের
শেষে আ-কার কিংবা
ই-কার থাকে না
তাদের নদ বলে।
যেমন-তুরাগ, কপোতাক্ষ, ব্রহ্মপুত্র,
নীল, বালু, সাঙ্গু প্রভৃতি
নদ নামে পরিচিত।
তবে এ সূত্রের কিছুটা
ব্যতিক্রম ও বিতর্ক লক্ষণীয়। সর্বাধিক
গ্রহণযোগ্য সূত্র হল : নামের
শেষে যদি আকার, একার,
ওকার, ঔকার প্রভৃতি থাকে
তবে নিশ্চিতভাবে সে প্রবাহগুলো নদী
নামে অভিহিত হবে।
নামের শেষে এগুলো না-থাকলে এবং শুধু
হ্রস্ব উ-কার থাকলে
সেটি নদ হবে।
যেমন : ‘আড়িয়ালখাঁ’ পুরুষজ্ঞাপক নাম হলেও শেষে
আকার রয়েছে। সে
জন্য এটি নদ না
হয়ে নদী। কিন্তু
‘মুসা খান’ নামের অন্ত-বর্ণ ‘দন্ত্য-ন’-এর পরে
আকার একার কিছু নেই,
এ জন্য এটি নদ। ‘সিন্ধু’
বানানের শেষে যেহেতু হ্রস্ব
উ-কার রয়েছে, সেহেতু
এটি নদ। একইভাবে
‘বালু’ একটি নদ।
‘নীল’ স্ত্রী নাম জ্ঞাপক
একটি প্রবাহ। যেহেতু
এর শেষে আকার, একার
কিছু নেই, সে জন্য
এটি নদ। এভাবে
‘ঘাঘট’ স্ত্রী নাম জ্ঞাপক
জলপ্রবাহ হলেও অন্তবর্ণ ‘ট’-এর পরে আ-কার, এ-কার
নেই, তাই এটি নদ।
অনেকে
নদ ও নদীর আরও
একটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেন। সেটি
হল - একটি সর্বদা পূর্ব-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত
হয় এবং
অন্যটি সর্বদা উত্তর-দক্ষিণ
দিকে প্রবাহিত হয়ে থাকে।
নদীর প্রবাহদিক খেয়াল করে থাকলে
নদের প্রবাহদিক অনুধাবন করা যায়।
আবার কারও কারও মতে,
নদের কোন শাখা বা
উপশাখা হয় না।
পুরুষবাচক নাম বলে হয়তো
এমন ধারণা। তবে
এর কোন ভিত্তি নেই। ব্রহ্মপুত্র
নদ হলেও শাখা আছে। যেমন
: শীতলক্ষ্যা ও যমুনা যদি
ব্রহ্মপুত্রের শাখা। আসলে,
নদ ও নদীর সঙ্গে
শাখা থাকা না-থাকা
নিয়ে কোন সম্পর্ক নেই। এটি
সম্পূর্ণ ব্যাকরণগত এবং ভারতীয় পুরাণ
বা প্রচলিত প্রবাদের উপর
নির্ভরশীল। আমাদের
উপমহাদেশের সংস্কৃতিতে নদ ও নদীকে
যথাক্রমে নারী
ও পুরুষ হিসেবে ভাগ
করার পেছনে পুরাণ, ধর্মীয়
ও লোকজ বিশ্বাসের ভূমিকা
গুরুত্বপূর্ণ। শাখা
থাকুক আর নাই থাকুক,
ব্রহ্মার পুত্র ব্রহ্মপুত্রকে মেয়ে
ভাবার কোন সুযোগ নেই।
তেমনি হিমালয়দুহিতা গঙ্গা, সে তো
নারী ছাড়া আর কিছু
হতে পারে না। পারে
কি?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন