প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচনের একটি ধারণা
-------------------------------------------------------
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দ এবং নির্দেশনাপত্র অনুযায়ী উপজেলা রিসোর্স সেন্টারসমূহ (URC) উপজেলা পর্যায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণসমূহ আয়োজন করে থাকে। সেক্ষেত্রে প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটার কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। আয়োজক কর্তৃপক্ষ নিজস্ব চিন্তাভাবনা থেকে এটা করে থাকেন। আমারও নিজস্ব একটি
ধারণা আছে।
যদি ম্যানুয়াল এবং
কারিকুলাম পরিবর্তন না হয় তাহলে একটি বিষয়ের প্রশিক্ষণ পূর্বে কেউ পেয়ে থাকলে তিনি
সেটা আর পাবেন না। ৩য় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী (পিইডিপি-৩) এর আওতায়
প্রণীত ম্যানুয়াল পিইডিপি-৪ এ ও কার্যকর আছে। তাই পিইডিপি-৩ এর আওতায় ২০১২-২০১৩
অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত একই বিষয়ের প্রশিক্ষণ কেউ পেয়ে থাকলে তিনি আর এখন সেই
বিষয়ে প্রশিক্ষণ পাবেন না।
ধরা যাক, একটি উপজেলায়
১০৪টি বিদ্যালয় এবং প্রায় ৬০০ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। ইতঃপূর্বে বাংলা বিষয়ের
প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ১২৫ জন শিক্ষক। তার মধ্যে কেউ কেউ অবসর নিয়েছেন আবার কেউ অন্য
উপজেলায় বদলি হয়ে চলে গেছেন। আবার কেউ উপজেলার ভিতরেই অন্য কোনো বিদ্যালয়ে বদলি
হয়েছেন। সে হিসেবে এখন ৫টি বিদ্যালয়ে কোনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নেই। আর কিছু
কিছু বিদ্যালয়ে একের অধিক এবং অধিকাংশ বিদ্যালয়ে ১জন করে বাংলা বিষয়ে
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন।
বাংলা বিষয়ে পূনরায়
প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে ৯০জনকে। সে মোতাবেক ৯০টি বিদ্যালয় বার তার কম সংখ্যক
বিদ্যালয়ের শিক্ষক এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ পাবেন। যেসব বিদ্যালয়ে একের অধিক
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন সেসব বিদ্যালয় প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষণের জন্য
বিবেচিত হবে না। এমন কিছু বিদ্যালয় রয়েছে যেখানে একজনমাত্র শিক্ষক কর্মরত আছেন।
সেই বিদ্যালয় থেকেও প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে আসা সমস্যা। তাছাড়া দুইজন শিক্ষক থাকলেও
সমস্যা বিশেষ করে পরীক্ষা চলাকালীন। তবে বিদ্যালয় নির্বাচন করা একটি জটিল বিষয়।
যেসব বিদ্যালয় বাদ পড়ে অন্য কোনো প্রশিক্ষণ শুরু হলে সেসব বিদ্যালয়কে
স্বাভাবিকভাবেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়ে থাকে।
এবার যেসব বিদ্যালয়ে
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নেই কিংবা মাত্র ১জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক আছেন সেসব
বিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়নের পালা।
যে বিষয়ে প্রশিক্ষণ
অনুষ্ঠিত হবে সেই বিষয়ে পাঠদান করেন এমন শিক্ষকদের মধ্য থেকেই প্রশিক্ষণার্থী
নির্বাচন করতে হবে। এটাই নীতিমালায় বলা আছে। (এটার কারণ হচ্ছে তিনি সেই পাঠদান না
করলে প্রশিক্ষণ নিলে সেটা কোনো কাজে আসবে না। আবার প্রশিক্ষণ চলাকালীন
প্রশিক্ষণার্থী যেমন বিরক্ত/ক্লান্তি বোধ করবেন তেমনি প্রশিক্ষকবৃন্দও আশানুরূপ
সাড়া না পেয়ে হতাশ হবেন।) সবচেয়ে বড় কথা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর এটার কোনো প্রয়োগ
হবেনা যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এবার যারা বাংলা বিষয়ে পাঠদান করেন তাদের মধ্যে যার
প্রাপ্ত বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের সংখ্যা তাকে মনোনয়ন করা হবে। তাই বলে চাকরিকাল
১/২ বছর হলে উনাকে নির্বাচন না করে সিনিয়র শিক্ষককে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে।
এর দুইটা কারণ। এক যিনি নবীন তিনি মাত্র চাকরিজীবন শুরু করেছেন। এর মধ্যে
বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত না হয়ে থাকলে তিনি প্রশিক্ষণ পাবেন না এটাই
স্বাভাবিক। তাছাড়া উনার ভবিষ্যত কর্মজীবনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার যথেষ্ট সুযোগ
রয়েছে। দেখা যাবে ৫/৭ বছর চাকরি করার পর
উনার প্রাপ্ত প্রশিক্ষণের সংখ্যা বেশ কয়েকটি হয়ে যাবে। তাছাড়া ডিপিএড প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকদের
বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণে অনেক কিছুই অনুধাবন করতে কষ্ট হয়। অপরদিকে যিনি বেশ কয়েকবছর যাবৎ চাকরি করছেন
তিনি যদি মাত্র ১/২টি প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকেন তাহলে উনাকে নির্বাচন করা যেতে পারে।
সেক্ষেত্রে উনার ব্যক্তিগত সমস্যা থাকলে পরবর্তী যিনি বাংলা পাঠদান করেন এবং
প্রাপ্ত প্রশিক্ষণ অধিকতর কম উনাকে নির্বাচন করা যেতে পারে। বিশেষ করে যারা
পিইডিপি-৩ এর শুরু থেকে এ পর্যন্ত মাত্র একটি বা দুইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন
তিনি অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবেন।
এভাবে প্রশিক্ষণার্থী
মনোনয়ন করে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করার পর দেখা যাবে সব মিলিয়ে বাংলা বিষয়ে
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা আনুমানিক ২০০ জন। তাহলে সেই উপজেলার
প্রায় ৪০০ শিক্ষক (বড় উপজেলা হলে আরও বেশি) বাংলা বিষয়ে প্রশিক্ষণ পাবেন না। এখন
কেউ যদি বলেন আমি ইংরিজ আর গণিত প্রশিক্ষণ পেয়েছি বাংলা পাঠদান করি, বাংলা
প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে চাই। সেটা অবশ্যই তার বলার অধিকার আছে। কিন্তু সার্বিক দিক
বিবেচনা করে একজনকে সব বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের সুযোগ একেবারেই নেই। তারপরও দেখা
যায় একজনের ৫টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ হয়ে গেছে। এটার কারণ হলো সেই বিদ্যালয়ে শিক্ষক
স্বল্পতা। একজন বা দুইজন শিক্ষক কর্মরত থাকলে তারাই পালাক্রমে সকল বিষয়ভিত্তিকসহ
অন্যান্য প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করবেন।
কখনো এমন হয়ে একটি
বিদ্যালয়ে যারা বাংলা বিষয়ে পাঠদান করেন তাদের মধ্যে যিনি তুলনামূলক কম প্রশিক্ষণ
পেয়েছেন তার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে সদ্য যোগাদানকৃত কোনো শিক্ষক শিক্ষক
প্রশিক্ষক পেয়ে থাকেন। এটাকে উদাহরণ হিসেবে বলার কিছু নেই।
এ পর্যায়ে বাংলা বিষয়ের
প্রশিক্ষণে যে ১৪টি বিদ্যালয় বাদ পড়লো দেখা যাবে অন্য কোনো বিষয়ের প্রশিক্ষণ
অনুষ্ঠিত হলে এই বিদ্যালয়গুলো প্রশিক্ষণের আওতায় আসবে এবং অন্য কিছু বিদ্যালয় বাদ
পড়বে। আবার এবার যে ৯০ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণ পেয়েছেন তারা বাদ পড়বেন আর উনার অন্য
কোনো সহকর্মী প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হবেন।
যখন একটি বিষয়ে
ইতঃপূর্বে কখনো প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়নি সেই বিষয়ে দুই ব্যাচ বা তিন ব্যাচ
প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত পরিচালনা করতে হবে তখন ১০৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে কোন কোন
বিদ্যালয় নির্বাচন করা হবে সেটার আর কোনো ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করা যায়না। তখন
বিদ্যালয়ের ক্রমিক ধরেই শুরু করতে হয়। পরবর্তীতে অন্য যেকোনো প্রশিক্ষণ শুরু হলে
উল্টো দিক থেকে শুরু করলে মোটামোটি একটি সামঞ্জস্য বজায় থাকে। যদিও সেক্ষেত্রে
কিছু বিদ্যালয় উভয় প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকে।
৫টি বিষয়ের ৩টি করে
ব্যাচে ৩০ জন করে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলেও ৪৫০ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণ পাবেন এবং প্রায়
১৫০ শিক্ষক প্রশিক্ষণ থেকে বাদ পড়বেন। সেই ১৫০ শিক্ষক কেন বাদ পড়লেন এটার ব্যাখ্যা
দেওয়া সত্যিই কঠিন। এক্ষেত্রে আমার অনুরোধ যেসব বিদ্যালয় বা যেসব সম্মানিত শিক্ষক
প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হন বা বাদ পড়েন তারা প্রশিক্ষণ আয়োজকদের অবস্থানে নিজেকে
বিবেচনা করে দেখবেন প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনি কোন পন্থা অবলম্বন
করতেন। আপনাকে যদি দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং আপনি যদি নিজেকে প্রশিক্ষণের জন্য মনোনয়ন
দেন তাহলে যিনি বাদ পড়বেন তাঁকে আপনি কী ব্যাখ্যা দিবেন সেটা একবার ভেবে দেখা যেতে
পারে।
প্রশিক্ষণের ডাটা
সংরক্ষণ এবং প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়নের জন্য প্রত্যেকে আলাদা আলাদা পদ্ধতি ব্যবহার
করেন। কেউ রেজিস্টার, কেউ এমএস এক্সেল আবার কেউ অন্য কোনো প্ল্যাটফরম ব্যবহার
করেন। কম্পিউটারে সফটওয়্যারের মাধ্যমে করলে কাজটি যেমন সহজ হয় তেমনি ভুল হওয়ার
সম্ভবনাও কম থাকে।
এ বিষয়ে অনেকের মনেই প্রশ্নের উদয় হয় আবার কেউ
কেউ দুঃখ প্রকাশ করেন প্রশিক্ষণে মনোনয়ন না পাওয়ার কারণে। আশা করছি সবাই বিষয়টি
অনুধাবন করে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন।
৪টি মন্তব্য:
Ali Afjal, DEO, URC, Saltha, Faridur.
বড় ভাই আমি কি আপনার ব্যবহৃত সফটওয়ারটি পেতে পারি? যদি আপনার সফটওয়ারটি আমার কাজে ব্যবহার করতে পারি তবে ইমেইল করলে খুশি হবো। ইমেইল
aliafjal22@gmail.com, urcsalthfaridpur@gmail.com
সফটওয়ারটি পেতে পারি
nasirurc@gmail.com
আমি কি আপনার সফটওয়ারটি পেতে পারি? যদি সম্ভব হয় তাহলে ইমেইলে (alzehadi@gmail.com অথবা urcghoradinaj@gmail.com) দিয়েন। অনেক উপকৃত হবো। আপনার সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
আমিও পেতে চাই।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন