পৃষ্ঠাসমূহ

*এখন ঢাকায় তারিখ ও সময়*

শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২০

EFT-তে মাতৃত্ব ছুটি এবং সন্তানের জন্ম তারিখের অসামঞ্জস্যতা নিয়ে কিছু প্যাঁচাল

** আমার লেখা আমার সম্পদ। দয়া করে কেউ নিজের ওয়ালে/গ্রুপে কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেবেন না। আমার লেখা সবাইকে জানানোর জন্য হলেও লিখতে মেধা এবং সময় দুটোই ব্যয় হয়। সংগৃহীত শব্দটি যুক্ত হয়ে আমার অস্তিত্ব হারিয়ে যাক এটাও আমি চাইনা।

 

মাতৃত্ব ছুটি এবং সন্তানের জন্ম তারিখের অসামঞ্জস্যতা নিয়ে কিছু প্যাঁচাল

--------------------------------------------------------------------

ইএফটি এর মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সকল কর্মচারীদের বেতন তাদের নিজ নিজ একাউন্টে প্রেরণের নিমিত্ত সার্ভিস বুক এবং এনআইডি অনুযায়ী ডিডিও কর্তৃক তার অধীনস্থ সকল কর্মচারীর তথ্য আইবাস সফটওয়্যারে  এন্ট্রি করতে হবে।

ডাটা এন্ট্রির কাজটি সহজে করার জন্য আইবাস কর্তৃপক্ষ একটি ফরম তৈরি করেছে। যা ইতোমধ্যেই সবাই সংগ্রহ করেছেন। ফরমের ৬ নম্বর অংশে ছুটি সংক্রান্ত বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও অনুচ্ছেদ ৫ এর পরে কোনো কিছু সফটওয়্যারে এখনো যুক্ত হয়নি।

ছুটির অংশে অন্যান্য ছুটির সাথে মাতৃত্ব ছুটির বিষয়টিও রয়েছে। এটা নিয়ে মহিলা কর্মচারীদের অনেকেই দু:শ্চিন্তায় আছেন। কারণ তারা যখন মাতৃত্ব ছুটি নিয়েছেন তার বেশ কয়েক মাস পরের জন্মতারিখ দিয়ে তাদের সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করেছেন। এখন সে অনুযায়ী তথ্য এন্ট্রি করা হলে মাতৃত্ব ছুটির তারিখ এবং সন্তানের জন্ম তারিখে সামঞ্জস্য থাকবে না। যদি না থাকে তাহলে কী হতে পারে এটাই চিন্তার বিষয়।

আমি বিষয়টি আমার মতো করে ব্যাখ্যা করছি।

প্রথমত বেতন ইএফটি-র মাধ্যমে দেয়ার মাধ্যমে সার্ভিস বুকের সকল তথ্য আইবাস সফটওয়্যারে এন্ট্রির কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরপর থেকে একজন কর্মচারীর চাকরিজীবনে যত ধরনের ঘটনা ঘটবে সব কিছুই এই সফটওয়্যারে এন্ট্রি করতে হবে। একটা সময়  কাগজের সার্ভিস বুকের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। অবসরে যাওয়ার সময় হলে সফটওয়্যার থেকে একটি স্ট্যাটমেন্ট প্রিন্ট করে সেটাকেই সার্ভিস বুকের বিকল্প হিসেবে চালিয়ে নেওয়া হবে। আবার এমনও হতে প্রিন্টই নেওয়া লাগবে না। অবসর, পেনশন সবকিছু অনলাইনেই মঞ্জুর হয়ে যাবে। জিপিএফ সংক্রান্ত বিষয়াদিও এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। ফাইল নিয়ে দৌড়াতে হবে না।

এখানে স্বামী/স্ত্রী এবং সন্তানের তথ্য এন্ট্রি করতে হবে কারন পেনশন এবং জিপিএফ এর ক্ষেত্রে উত্তরাধীকারের বিষয় রয়েছে। তাছাড়া শিক্ষা ভাতা গ্রহণের জন্যও সন্তানের তথ্য অবশ্যই প্রয়োজন। এখানে এন্ট্রি দেওয়া জন্মতারিখ অনুযায়ী যখন সন্তানের বয়স ৫ বছর পূর্ণ হবে শুধু তখনই শিক্ষা ভাতা গ্রহণ করা যাবে। এখানে প্রত্যয়ন বা জন্মসনদ জমা দেওয়ার কোনো বিষয় নেই। তেমনি একজন সন্তানের বয়স ২৩ বছর পূর্ণ হলে সে সন্তানের জন্য আর শিক্ষা ভাতা পাওয়া যাবে না। যদি ২ এর অধিক সন্তান থাকে তাহলে ১ম সন্তানের বয়স ২৩ পূর্ণ হলে ২য় এবং ৩য় সন্তানের জন্য ১০০০ টাকা ভাতা পাওয়া যাবে। এভাবে ২য় সন্তানের বয়স পূর্ণ হলে ৩য় এবং তার পরেও যদি সন্তান থাকে তাদের জন্য পাওয়া যাবে। আর না থাকলে ১ জনের জন্য ৫০০ টাকা হয়ে যাবে। একসময় সকল সন্তানের বয়স ২৩ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষা ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে। স্বামী/স্ত্রী এবং সন্তানের তথ্য পরবর্তী সময়েও যোগ করা যাবে কারণ এখন তথ্য এন্ট্রি করার পরও কারো বিয়ে হতে পারে, সন্তান জন্ম নিতে পারে।

এবার আসি মাতৃত্ব ছুটির বিষয়ে। একজন মহিলা কর্মচারী তার কর্মজীবনে সর্বোচ্চ দুইবার এই ছুটি ভোগ করতে পারবেন। চাকরিতে যোগদানের পূর্বে যত সন্তানই থাকুক যোগদানের পরদিন থেকে সমগ্র চাকরিজীবনে দুইবার। আর মাতৃত্ব ছুটি অর্জিত ছুটি থেকে বিয়োগ হয়না। দুইয়ের অধিকবার যেন ভোগ না যায় তাই এই ছুটি সার্ভিস বুক এবং সফটওয়্যারে এন্ট্রি থাকা জরুরী।

এবার আসি মাতৃত্ব ছুটির সাথে সন্তানের জন্মতারিখের সামঞ্জস্য না থাকলে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে । আমার মনে হয় কোনো সমস্যা হবেনা। প্রথমত মাতৃত্ব ছুটি সার্ভিস বুকে এন্ট্রির সময় সন্তানের নাম উল্লেখ করা হয়না। আবার সেই সন্তান পরবর্তীকালে জীবিত থাকল না মৃত্যুবরণ করলো সেটাও সার্ভিস বুকে এন্ট্রি হয়না। আবার দুইবার মাতৃত্ব ছুটি এন্ট্রি করার পূর্বে বা পরে কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ করলো কিনা, তাদের জন্মতারিখ কত সেসব কিছুও অদ্যাবধি এন্ট্রি করার নিয়ম চালু হয়নি। সঙ্গত কারণেই মাতৃত্ব ছুটি এবং সন্তানের জন্ম তারিখের মিল খোঁজা একটু হলেও কষ্টকর। ধরা যাক যাচাই করতে গিয়ে মিল পাওয়া গেল না। সেক্ষেত্রে হয় মাতৃত্ব ছুটির তারিখ ভুল এন্ট্রি করা হয়েছে অথবা জন্মসনদ ভুলভাবে তৈরি করা হয়েছে। যদি মাতৃত্ব ছুটির তারিখ ভুল হয় তাহলে যে চিকিৎসকের সনদের প্রেক্ষিতে ছুটি অনুমোদন করা হয়েছিল তিনি দায়ী। অপর দিকে এ বিষয়ে যদি সন্দেহের অবকাশ থাকত তাহলে অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ সেসময় অধিক যাচাই বাছাই করতে পারতেন। অন্যদিকে যদি মাতৃত্ব ছুটির তারিখ সঠিক ধরে নেওয়া হয় তাহলে জন্মসনদ ভুল তারিখ অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। এই ভুলের জন্য সনদ ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী। তারা সঠিক ডকুমেন্ট যাচাই বাছাই না করে সনদ ইস্যু করেছেন। এক্ষেত্রে উনাদের ব্যাখ্যা হবে আমরা যা পেয়েছিলাম সেটা সঠিক বলেই মনে হয়েছিল বলে সনদ ইস্যু করেছিলাম। আর এভাবেই চলতে থাকবে একে অন্যের উপর দোষারূপ প্রক্রিয়া। আর এমন সমস্যা রয়েছে বাংলাদেশের অনেকেরই যাদের প্রকৃত জন্ম তারিখ জন্ম সনদে দেওয়া হয়নি।

তাহলে এর শেষ কোথায়? হ্যাঁ এর শেষ আছে কারণ এমন অবস্থা শুরুই হবেনা। সন্তানের তথ্য নেওয়া হবে একটি কারণে আর মাতৃত্ব ছুটির তথ্য নেওয়া হবে অন্য কারণে। এই দুটোকে গুলিয়ে ফেলার কোনো কারণ আছে বলে মনে করিনা আমি। আর এ কারণেই দু:শ্চিন্তা সরিয়ে রাখতে বলছি আমি।

এই ব্যাখ্যা একান্তই আমার নিজস্ব। কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

৭টি মন্তব্য:

Suman Parvez বলেছেন...

দারুণ বিশ্লেষণ। ♥

Unknown বলেছেন...

এই তথ্য দ্বারা অনেক চাকুরিজীবিই মানসিক প্রশান্তি লাভ করবেন। ধন্যবাদ।

শরীফুল আলম বলেছেন...

যৌক্তিক অনুধাবন

Unknown বলেছেন...

অশেষ ধন্যবাদ।

Unknown বলেছেন...

অনেক ভালো লাগলো

MOLLA ANISUZ ZAMAN বলেছেন...

খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সম‌য়োপ‌যোগী পোস্ট। অসংখ্য ধন্যবাদ।

Unknown বলেছেন...

শ্রান্ত বিনোদনের ছুটির কথা কি উল্লেখ করতে হবে ?